শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮ অপরাহ্ন

০০৭ বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিল বরগুনা কলেজ

০০৭ বাহিনীর কাছে জিম্মি ছিল বরগুনা কলেজ

স্বদেশ ডেস্ক: বরগুনা সরকারি কলেজ ও তার আশপাশের এলাকার মানুষ ছিল নয়ন-রিফাত ফরাজী বাহিনীর হাতে জিম্মি। এ বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের ভয়ে প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, মুখ খুলতেও সাহস পাননি কেউ। কলেজ ও আশপাশে সরেজমিন অনুসন্ধানে এ তথ্যই উঠে এসেছে।

যদিও কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ এটি স্বীকার করতে নারাজ। বরগুনা সরকারি কলেজ অফিস সূত্রে জানা যায়, কলেজ ক্যাম্পাস মোট ১৬টি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে প্রশাসনিক ভবনের পূর্ব পাশে গেট বরাবর যে ক্যামেরাটি রয়েছে সেটিতেই রিফাত হত্যার ঘটনার পুরোটাই ধরা পড়ার কথা।

কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষের দাবি, গত ২১ ও ২২ জুন বজ্রপাতের ঘটনায় ক্যামেরা সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। আর রিফাত হত্যার ঘটনা ঘটে ২৬ জুন। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। তাদের ধারণা, পুরো কলেজ ক্যাম্পাসহ কর্তৃপক্ষ নয়ন-রিফাত বাহিনীর হাতে জিম্মি থাকায় সেটিকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ প্রফেসর

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে নয়ন-রিফাত ফরাজী বাহিনীর কোনো প্রভাব ছিল না। এ বাহিনীর কোনো সদস্য, এমনকি রিফাত শরীফও আমাদের কলেজের ছাত্র না। তাদের হাতে কলেজ জিম্মি থাকার কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। কলেজ ক্যাম্পাস, শ্রেণিকক্ষ, হোস্টেল, লাইব্রেরির কোথাও তাদের আনাগোনা ছিল না।’ অধ্যক্ষের অভিমত, তাকে সম্মান করত বলেই তার সামনে নয়ন-রিফাত বাহিনী কোনো উদ্ধত আচরণ করেনি কখনো।

তবে কলেজ হোস্টেলে থাকা কয়েকজন ছাত্র জানায়, নয়ন-রিফাত গং প্রায়ই হোস্টেলে এসে মাদক সেবন ও মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যেত। এ পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি রিফাত ফরাজীকে দু-দুবার পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি।’ তবে যে বললেন ওই বাহিনীর কোনো প্রভাব কলেজ ক্যাম্পাসে ছিল না-অধ্যক্ষ বলেন, ‘এর পর আর আসেনি।’

বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘মাস তিনেক আগে রিফাত ফরাজীকে পুলিশের হাতে সোপর্দের পর কলেজ শিক্ষকরাই তদবির করে তাকে ছাড়িয়ে নেন।’ শিক্ষকদের নাম মনে আছে? জানাতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সেটা আমার খেয়াল নেই।’ নয়ন-রিফাত বাহিনীর হাতে জিম্মি ছিল কলেজটির আশপাশের এলাকাও।

এ ব্যাপারে শহরের বাসিন্দা এমআর অভি বলেন, ‘নয়ন বন্ড ছ্যাঁচড়া চোর থেকে রিফাত-রিসান ফরাজীর সহাচার্যে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু রিফাত-রিসান ফরাজীর মোবাইল ছিনতাই, মারামারি, ইভটিজিং, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কুকীর্তির কথা সাত-আট বছর থেকেই শুনে আসছি।’ একই কথা জানালেন ডিকেপি রোডের মোসলেম, তরিকুল ইসলাম, কলেজ রোডের বাশারসহ অনেকেই।

তবে ওই এলাকার দোকানদাররা এখনো মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তাদের ধারণা, নয়ন-রিফাত গংয়ের পেছনে বড় কোনো খুঁটি আছে, যাদের জোরে তারা ধরাকে সরাজ্ঞান করত। এক সময় মাদকব্যবসা চালাতে নয়ন বন্ড গড়ে তোলে ‘০০৭’ বাহিনী, যার সদস্যসংখ্যা ৩৬৬। একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, বরগুনার কয়েকটি প্রাইভেট স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও গ্রুপটির সদস্য।

এর মধ্যেই গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে রিফাত শরীফকে ধরে নিয়ে যায় ০০৭ বাহিনী। এর পর কলেজ গেটের বাইরে চারদিক থেকে ঘিরে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজীসহ সন্ত্রাসীরা স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সামনেই রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তাকে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে বরগুনা জেরারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয় এ যুবকের। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ব্যাপারে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরদিন বরগুনা থানায় নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজীসহ ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি ০০৭ বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড রিফাত ফরাজীসহ পাঁচজন এবং সন্দেহভাজন পাঁচজনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশপাশি প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত ১ জুলাই রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।

হত্যার দায় স্বীকার করে আরও দুই আসামির জবানবন্দি : রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত সাগর ও নাজমুল। গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী মো. সিরাজুল ইসলামের আদালতে তাদের হাজির করা হলে জবানবন্দি দেয়। একই সঙ্গে রিমান্ডে থাকা সাইমুনকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ূন কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে আসামি চন্দন, মো. হাসান, অলি ও তানভীর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে। বাকিদেরও শিগগিরই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877